উদ্ভিদ কোষ প্রাচীর গঠন, রাসায়নিক উপাদান এবং কার্যাব

 কোষ প্রাচীর (Cell Wall)


প্রতিটি উদ্ভিদকোষ একটি অপেক্ষাকৃত শক্ত জড় আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে। এ জড় ও শক্ত আবরণকে কোষ প্রাচীর বলে। রবার্ট হুক ১৬৬৫ সালে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে যে কোষ দেখেছিলেন তা ছিল মূলত কোষ প্রাচীর। কোষ প্রাচীর উদ্ভিদকোষের অনন্য বৈশিষ্ট্য। উদ্ভিদ কোষে মধ্য পর্দা এবং কোষঝিল্লির মাঝখানে জড় কোষ প্রাচীরের অবস্থান। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকেও কোষ প্রাচীর আছে। কোষঝিল্লির বাইরে জড় প্রাচীরের অবস্থান। প্রাণিকোষে কোষ প্রাচীর থাকে না।


ভৌত গঠন (Physical structure):


একটি বিকশিত কোষ প্রাচীরকে প্রধানত তিনটি ভিন্ন স্তরে (layers) বিভক্ত দেখা যায়। এর প্রথম স্তরটি হলো মধ্যপর্দা (middle lamella)। মাইটোটিক কোষ বিভাজনের টেলোফেজ (telophase) পর্যায়ে এর সূচনা ঘটে। সাইটোপ্লাজম থেকে আসা ফ্যামোপ্লাস্ট (phragmoplast) এবং গলগি বডি থেকে আসা পেকটিন জাতীয় ভেসিকলস্ (vesicles or droplets) মিলিতভাবে মধ্যপর্দা সৃষ্টি করে। পেকটিক অ্যাসিড বেশি থাকার কারণে এটি প্রথম দিকে জেলির মতো থাকে। কোষ প্রাচীরের যে স্তরটি দুটি পাশাপাশি কোষের মধ্যবর্তী সাধারণ পর্দা হিসেবে অবস্থান করে তার নাম মধ্যপর্দা। এটি বিগলিত হয়ে গেলে দুটি কোষ পৃথক হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্তরটি হলো প্রাথমিক প্রাচীর (primary wall)। মধ্যপর্দার ওপর সেলুলোজ (cellulose), হেমিসেলুলোজ (hemicellulose) এবং গ্লাইকোপ্রোটিন (glycoprotein) ইত্যাদি জমা হয়ে একটি পাতলা স্তর (১-৩ µm পুরু) তৈরি করে। এটি প্রাথমিক প্রাচীর। মধ্যপর্দার অন্তঃতলে এটি তৈরি হয়। কোনো কোনো কোষে (যেমন- ট্রাকিড, ফাইবার ইত্যাদি) প্রাথমিক প্রাচীরের ওপর আর একটি স্তর তৈরি পুরু (৫-১০ µm)। এতে সাধারণত সেলুলোজ এবং লিগনিন জমা হয়। এটি সেকেন্ডারি প্রাচীর (secondary wall) বা তৃতীয় স্তর। ভাজক কোষ এবং অধিক মাত্রায় বিপাকীয় অন্যান্য কোষে সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হয় না। সেকেন্ডারি প্রাচীর তিন স্তরবিশিষ্ট হয়। বিরল ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি প্রাচীরের ভেতরের দিকে টারশিয়ারি প্রাচীর (tertiary wall) জমা হতে পারে।এটি সাধারণত কোষের বৃদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হবার পর ঘটে থাকে। এ স্তরটি অধিকতর 


কূপ এলাকা (Pit fields):


মধ্যপর্দার উপর মাঝে মাঝে প্রাথমিক প্রাচীর সৃষ্টি না হলে যে সরু নলাকার গর্তের সৃষ্টি হয় তাই হলো কূপ। এটি হলো প্রাচীরের সবচেয়ে পাতলা (thin) এলাকা। দুটি পাশাপাশি কোষের কূপও একটি অপরটির উল্টোদিকে মুখোমুখি অবস্থিত এবং কূপ দুটির মাঝখানে কেবল মধ্যপর্দা থাকে। মধ্যপর্দাকে পিট মেমব্রেন বলে। মুখোমুখি দুটি কূপকে পিট পেয়ার (pit pair) বলে। আসলে কূপ অঞ্চলে প্রাথমিক প্রাচীর গঠিত হয় না। সেকেন্ডারি প্রাচীর তৈরি হলে কূপ পাড়হীন অথবা পাড়যুক্ত (bordered pit) হতে পারে। দুটি পাশাপাশি কোষের প্রাচীরের সূক্ষ্ম ছিদ্র পথে নলাকার সাইটোপ্লাজমিক সংযোগ স্থাপিত হয়। একে প্লাজমোডেসমাটা (একবচন: প্লাজমোডেসমা) বলে।

রাসায়নিক গঠন (Chemical structure) :


মধ্যপর্দায় অধিক পরিমাণে থাকে পেকটিক অ্যাসিড ক্যালসিয়াম পেকটেট এবং ম্যাগনেসিয়াম পেকটেট লবণ থাকে- যাকে পেকটিন বলা হয়। এ ছাড়াও অল্প পরিমাণে থাকে । এ ছাড়া অদ্রবণীয় প্রোটোপেকটিন। প্রাথমিক প্রাচীরে থাকে প্রধানত সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ এবং গ্লাইকোপ্রোটিন। হেমিসেলুলোজ-এ xylans, arabans, galactans ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের পলিস্যাকারাইডস থাকে। গ্লাইকোপ্রোটিনে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন অনেকের প্রাচীন নামক থেমিসেলুলোজ প্রাচীর গঠনে ক্রসলিংক প্রোটিনে কার্বোহাইড্রেট কেরে। অনেক সেকেন্ডারি প্রাচীরে লিগনিন (lignin) থাকে। কোনো কোনো প্রাচীরে সুবেরিন (suberin), ওয়াক্স ইত্যাদি থাকে। ছত্রাকের প্রাচীর কাইটিন এবং ব্যাকটেরিয়ার প্রাচীর লিপিড-প্রোটিন পলিমার দিয়ে গঠিত। সাধারণত কোষ প্রাচীরের 40% সেলুলোজ, 20% হেমিসেলুলোজ, 30% পেকটিন ও 10% গ্লাইকোপ্রোটিন বিদ্যমান।


সূক্ষ্ম গঠন (Ultra-structure) :


কোষ প্রাচীরের প্রধান উপাদান হলো সেলুলোজ। সেলুলোজ হলো একটি পলিস্যাকারাইড যা ৬-কার্বনবিশিষ্ট B-D গ্লুকোজের অসংখ্য অণু নিয়ে গঠিত। ১ হাজার থেকে ৩ হাজার সেলুলোজ অণু নিয়ে একটি সেলুলোজ চেইন গঠিত হয়। প্রায় ১০০ সেলুলোজ চেইন মিলিতভাবে একটি ক্রিস্টালাইন মাইসেলি (micelle) গঠন করে। মাইসেলিকে কোষ প্রাচীরের ক্ষুদ্রতম গাঠনিক একক ধরা হয়। প্রায় ২০টি মাইসেলি মিলে একটি মাইক্রোফাইব্রিল (microfibril) গঠন করে এবং ২৫০টি মাইক্রোফাইব্রিল মিলিতভাবে একটি ম্যাক্রোফাইব্রিল (macrofibril) গঠন করে। অনেকগুলো ম্যাক্রোফাইব্রিল মিলিতভাবে একটি তন্তু (ফাইবার) গঠন করে।


কোষ প্রাচীরের কাজ :


(i) কোষের সুনির্দিষ্ট আকৃতি দান করা;

(ii) বাইরের আঘাত হতে ভেতরের সজীব বস্তুকে রক্ষা করা;

(iii) প্রয়োজনীয় শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করা;

(iv) পানি ও খনিজ লবণ শোষণ ও পরিবহণে সহায়তা করা;

(v) এক কোষকে অন্য কোষ হতে পৃথক করা;

(vi) কোষ প্রাচীরের কূপ এলাকা (ছিদ্র পথ) দিয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু কোষের ভেতরে বা বাইরে চলাচল করে থাকে এবং

(vii) বহিঃ ও অন্তঃ উদ্দীপনার পরিবাহকরূপে প্লাজমোডেসমাটা কাজ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url