জিন ও বংশগতির বৈশিষ্ট্য মা-বাবা থেকে সন্তানদের গুণগত বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরের বিজ্ঞান
জিন
গ্রেগর যোহান মেন্ডেল (Gregor Johann Mendel, 1822-1884) মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণা করা কালে (১৮৬০ এর দশকে) উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের বাহককে কণা বা ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরবর্তীতে যোহানসেন (Johannsen) ১৯০৯ সালে সর্বপ্রথম ঐ কণা বা ফ্যাক্টরকেই জিন (gene) হিসেবে অভিহিত করেন। ১৯১২ সালে T. H. Morgan প্রমাণ করেন যে, জিন কোষের ক্রোমোসোমে অবস্থিত। ভারতীয় বিজ্ঞানী Har Gobinda Khorana কৃত্রিম জিন সংশ্লেষণ করে ১৯৬৯ সালে নোবেল পুরষ্কার পান।
ক্রোমোসোমের যে স্থানে একটি জিন অবস্থান করে ঐ স্থানকে লোকাস (locus) বলে। কিন্তু জিন কী?
বীডল এবং ট্যাটাম (George Beadle and Edward L. Tatum- 1941) Neurospora crassa নামক ছত্রাক নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর বলেন যে, নির্দিষ্ট জিন নির্দিষ্ট এনজাইম তৈরির জন্য দায়ী। এর মাধ্যমেই বিজ্ঞানী Garrool সর্বপ্রথম 'এক জিন এক এনজাইম' মতবাদ চালু করেন। এর আগে থেকেই জানা ছিল এনজাইম মানেই প্রোটিন, তাই পরবর্তীতে উক্ত মতবাদ পরিমার্জন করে বলা হয় 'এক জিন এক পলিপেপটাইড চেইন'। অর্থাৎ এনজাইম এবং প্রোটিন অণু জিন কর্তৃক সৃষ্ট।
সিক্স সেল হিমোগ্লোবিন (৬০০ অ্যামিনো অ্যাসিড নিয়ে গঠিত) নিয়ে কাজ করে Vernon Ingram (১৯৫৯) দেখান যে, এই প্রোটিনে ৬০০ অ্যামিনো অ্যাসিড একটি নির্দিষ্ট সাজ (sequense) অনুযায়ী সজ্জিত। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে অ্যামিনো অ্যাসিডের ভিন্ন ভিন্ন সাজ পদ্ধতির জন্যই বহু বৈচিত্র্যময় এনজাইম তৈরি হয় এবং এক একটি এনজাইম এক একটি সুনির্দিষ্ট জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য দায়ী। তাই প্রোটিনকে বলা হলো জীবনের ভাষা (Language of life)।
ক্রোমোসোমে, বিশেষ করে সুগঠিত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোসোমে প্রোটিন এবং DNA দু'টোই থাকে, এর কোনোটি জিন?
Pneumococci নিয়ে গবেষণা করে Frederick Griffith দেখেন যে, এর ভাইরুলেন্ট প্রকরণের ক্যাপসুল সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্যটি স্থানান্তরযোগ্য। পরে O.T. Avery প্রমাণ করেন যে, এই ব্যাকটেরিয়ার ক্যাপসুল (দেহের চারদিকে পুরু আবরণ) তৈরির বৈশিষ্ট্য স্থানান্তরিত হয় DNA দিয়ে। কাজেই বোঝা গেল DNA-ই হচ্ছে জিনু
আধুনিক ধারণা মতে, জিনকে বিভিন্ন একক রূপে প্রকাশ করা হয়।
যেমন-রেকন, মিউটন, রেপ্লিকন ও সিট্রন।
১। রেকন (Recon): এটি জিন রিকম্বিনেশন এর একক, DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম একক জেনেটিক রিকম্বিনেশনে অংশ গ্রহণ করে তাকে রেকন বলে। রেকন এক অথবা দুই জোড়া নিউক্লিয়োটাইড দিয়ে গঠিত।
২। মিউটন (Muton): একে জিন মিউটেশনের একক বলা হয়। DNA অণুর যে ক্ষুদ্রতম অংশে মিউটেশন সংঘটিত হয়, তাকে মিউটন বলে। এক বা একাধিক নিউক্লিয়োটাইড যুগল নিয়ে মিউটন গঠিত হয়ে থাকে।
৩। রেপ্লিকন (Replicon): DNA-এর যে অংশ DNA-এর অনুলিপন নিয়ন্ত্রণ করে তাকে রেপ্লিকন বলে অর্থাৎ এটি
রেপ্লিকেশন এর একক।কারের একক। ৪। সিসট্রন (Cistron): জিন কার্যের একক। DNA অণুর যে খণ্ডাংশ কোষীয় বস্তুর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে তাকে
সিসট্রন বলে। Escherichia coli ব্যাকটেরিয়ার একটি সিসট্রনে প্রায় ১৫০০টি নিউক্লিয়োটাইড যুগল থাকে। প্রতিটি সিসট্রনে অনেক রেকন ও মিউটন থাকে। তাই রেকন ও মিউটন অপেক্ষা সিট্রনের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে
জিন ও সিসট্রন প্রায় সমতুল্য (equivalent) অর্থ বহন করে। জিন হলো ক্রোমোসোমের লোকাসে অবস্থিত DNA অণুর সুনির্দিষ্ট সিকোয়েন্স যা জীবের একটি নির্দিষ্ট 'কার্যকর সংকেত' আবদ্ধ (encode) করে এবং প্রোটিন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটায়। অন্যভাবে বলা যায়, জিন ক্রোমোসোমন্থ DNA-এর একটি অংশ যা। 'একটি কর্মক্ষম পলিপেপটাইড শিকল গঠনের উপযুক্ত বার্তা বহন করে।
জিনের বৈশিষ্ট্যাবলি
1. জিন নিউক্লিক অ্যাসিড দিয়ে গঠিত।
ii. এরা প্রকৃত কোষের ক্রোমোসোমে অবস্থান করে এবং আদি কোষের নিউক্লিয় বস্তু বা প্লাসমিডে অবস্থান করে।
iii. এটি জীবের প্রকরণ (variety) এবং পরিব্যক্তিতে (mutation) মুখ্য ভূমিকা রাখে।
iv. জিন জীবের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিকভাবে বহন করে।
v. জীবের এক একটি বৈশিষ্ট্যের জন্য একাধিক জিন দায়ী।