এইচএসসি জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র : অধ্যায় ১২ HSC Biology 1st Paper : Chapter 12 MCQ
সার-সংক্ষেপ
জীববৈচিত্র্য: Biodiversity-এর বাংলা জীববৈচিত্র্য করা হয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে পৃথিবীতে বিরাজমান
জীবসমূহের সামগ্রিক সংখ্যাপ্রাচুর্য ও ভিন্নতা হলো জীববৈচিত্র্য। জীব বলতে অণুজীব, ছত্রাক, উদ্ভিদ ও প্রাণীকে বুঝায়। পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ প্রজাতির জীব রয়েছে। এরা একটি থেকে অপরটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং পৃথকযোগ্য। একটি প্রজাতির সব ব্যক্তি (individual) কি একই রকম? সামগ্রিক গঠনে একই রকম হলেও সূক্ষ্মতর বৈশিষ্ট্যে এরা পার্থক্যমণ্ডিত। পৃথিবীর সকল মানুষ একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রতিটি মানুষই একজন থেকে অপরজন আলাদা। জিনগত পার্থক্যের কারণে একই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়েও প্রত্যেক ব্যক্তিই পৃথকযোগ্য, ভিন্ন। পরিবেশ তথা ইকোসিস্টেম জীব প্রজাতিসমূহকে ধারণ করে। একটি ইকোসিস্টেম থেকে অন্য একটি ইকোসিস্টেমের গঠনগত পার্থক্য থাকলে তাদের ধারণকৃত জীবপ্রজাতিসমূহের মধ্যেও পার্থক্য থাকবে। একটি জলজ ইকোসিস্টেমে যে ধরনের জীব বাস করে, একটি স্থল ইকোসিস্টেমে অন্য ধরনের জীব বাস করে। সুন্দরবনের ইকোসিস্টেমে যে ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে, মধুপুর বনের ইকোসিস্টেমে অন্য ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে। কাজেই দেখা যায় জীববৈচিত্র্যের সাথে জিন, প্রজাতি ও ইকোসিস্টেম নিবিড়ভাবে জড়িত। কাজেই জীববৈচিত্র্যকে সাধারণত তিনটি পর্যায়ে আলোচনা করা হয়, যথা জিনগত বৈচিত্র্য (Genetic diversity), প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species diversity of Taxonomic diversity) এবং ইকোসিস্টেমগত বৈচি netic diversity) তিন প্রকার বৈচিত্র্য মিলিতভাবে সৃষ্টি করেছে জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity। প্রাথমিকভাবে Biological Diversity নামে ১৯৮০ সালে দুটি প্রবন্ধে বিষয়টি প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে Walter Rosen দু'টি শব্দকে মিলিয়ে
Biodiversity হিসেবে প্রকাশ করেন। জীব সংরক্ষণ বা কনজারভেশন: কনজারভেশন (conservation) শব্দটি জীববৈচিত্র্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করার নামই কনজারভেশন। বাংলায় সংরক্ষণ বলতে প্রিজাীববৈচিত্র্যের সাথে সম্পর্কযুজারভেশন ও কনজারভেশনের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। কনজারভেশন হলো মানুষ কর্তৃক জীবমণ্ডলের ব্যবহার সংক্রান্ত এমন ব্যবস্থাপনা হতে করে জীবমণ্ডল বর্তমান প্রজন্মের জন্য সর্বোচ্চ মাত্রায় সুফল প্রদান করতে পারে এবং একই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সব প্রয়জন ও আকাঙ্ক্ষা পূরণের সম্ভাবনাও সমভাবে অক্ষুন্ন থাকে। কাজেই কনজারভেশন বলতে বোঝায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ, পুনরুদ্ধার একট বৃক্ষ কেটে কাঠ ব্যবহার করবো এবং একই সাথে আমার ঘটিকে সহজভাবে বলা যায়, আমার বর্তমান প্রয়োজনে একাধিক বৃক্ষ কেটে কাঠ ব্যবহার করতে পারে তার ব্যবস্থা করে যাবো (অর্থাৎ একটি গাছ কালে আমের গােকনজারভেশনের দু'টি প্রধান উপায় হলো
(i) ইন-সিটু কনজারভেশন এবং
(ii) এক্স-সিটু কনজারভেশন।
(1) ইন-সিটু কনজারভেশন হলো জীববৈচিত্র্যের উপাদানকে তাদের নিজস্ব আবাসভূমিতে রেখেই সংরক্ষণ করা। ধ্রুববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো ইন-সিটু পদ্ধতিতে কনজার্ভ করা। ন্যাশনাল পার্ক, ইকোপার্ক, সাফারি পার্ক, বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, মৎস্য অভয়াশ্রম ইত্যাদি সৃষ্টির মাধ্যমে ইন-সিটু কনজারভেশন করা হয়।
(ii) এক্স-সিটু কনজারভেশন হলো জীববৈচিত্র্যের উপাদানকে তাদের নিজস্ব বাসস্থানের বাইরে অন্য কোনো স্থানে সরক্ষণ করা। বোটানিক গার্ডেন, সীড ব্যাংক, ফিল্ড জিন ব্যাংক, নিম্নতাপমাত্রায় ও তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ পদ্ধতিগুলো হলো এক্স-সিটু কনজারভেশন।
এই অধ্যায়ে দক্ষতা অর্জন
১। গ্রিক Oikos অর্থ বাসস্থান এবং logos অর্থ জ্ঞান। শব্দ ২টি থেকে Ecology শব্দটির উৎপত্তি। H. Reiter নামক একজন জার্মান বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম Ecology শব্দটি ব্যবহার করেন।
২। প্রজাতি বলতে সর্বাধিক বৈশিষ্ট্যের মিলসম্পন্ন একদল জীবকে বোঝায় যারা এই দলভুক্ত (প্রজাতিভুক্ত) অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যৌন মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কিন্তু অন্যদলের (অন্য প্রজাতির) সদস্যদের সাথে যৌন মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে অক্ষম।
৪। একটি নির্দিষ্ট স্থানে একই সময় বসবাসকারী একই প্রজাতির একদল জীবকে পপুলেশন (population) বা জীবগোষ্ঠী বলা হয়।
৫। একট নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী ও সম্মিলিতভাবে পরস্পরের উপর ক্রিয়াশীল সব প্রজাতির সব পপুলেশন মিলিতভাবে একটি কমিউনিটি বা জীবসম্প্রদায় গঠন করে।
৬। ইকোলজির মূল উপাদান হলো তিনটি। যথা- জীবসম্প্রদায়ের Abundance, Distribution and Adaptation অর্থাৎ ADA।
৭। কোনো স্থানের জীব সম্প্রদায় ও এদের পরিবেশ নিজেদের মধ্যে এবং পরস্পরের মধ্যে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার গতিময় পদ্ধতিকে বলা হয় বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম।
৮। যে কোনো বাস্তুতন্ত্রের জীব উপাদান হলো- (i) উৎপাদক (producer), (ii) খাদক (consumer) এবং (iii) বিয়োজক (Decomposer).
৯। উৎপাদক থেকে বিভিন্ন জীবস্তরের মধ্য দিয়ে খাদ্য শক্তির প্রবাহকে খাদ্যশৃঙ্খল বা ফুড চেইন বলে।
১০। ফুট চেইনের ৯ বিভিন্ন খাদ্যবস্তুকে ট্রফিক লেভেল বলে।
১১। প্রকৃতিতে যেকোনো বাস্তুতন্ত্রে একাধিক খাদ্য শৃঙ্খল পরস্পর যুক্ত থাকলে তাকে ফুডওয়েব বা খাদ্যজাল বলে।
১২ । বাস্তুতন্ত্রে শক্তি প্রবাহ নিম্নরূপ: ১। উৎপাদক ২। তৃণভোজী খাদক ৩। মাংসাশী খাদক।
১৩। বাস্তুতন্ত্রে শক্তি একমুখী: উৎপাদক থেকে খাদকে।
১৪। উৎপাদক থেকেপ্রবাহ ও প্রতি খাদ্যন্তরে ১০ শতাংশহারে শক্তি জমা হয়। শক্তি প্রবাহে এটি ১০ শতাংশ নিয়ম নামে ৪১২
১৬ । পরিবর্তীত পরিবেশে জীবের খাপখাইয়ে নেয়াকে জীবের অভিযোজননি। ফাই। পানিতে জন্ম ও। বলে। = = উদ্ভিদ) বা জলজ উদ্ভিদ বিস্তার লাভ করা উদ্ভিদগুলোকে হাইড্রোফাইট (হাইড্রোস। হাইড্রিলা নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদের একটি উদাহরণ।
১৮। ক্ষুদিপানা মুক্তভাসমান জলজ উদ্ভিদের একটি উদাহরণ।
১৯। শাপলা মূলাবদ্ধ পত্র-ভাসমান জলজ উদ্ভিদের একটি উদাহরণ।
২০। কলমিলতা উভচর উদ্ভিদের একটি উদাহরণ।
২১। জলজ উদ্ভিদের বায়ুকুঠুরী বিশিষ্ট অন্তঃঅঙ্গসংস্থানিক গঠনকে অ্যারেনকাইমা বলে।
২২। মরুময় পরিবেশে জন্মানো উদ্ভিদকে জেরোফাইট বা মরুজ উদ্ভিদ বলে। ফণিমনসা, করবী হলো জেরোফাইটের উদাহরণ।
২৩। লবণাক্ত পরিবেশে জন্মানো উদ্ভিজ্জকে হ্যালোফাইট বা লোনামাটির উদ্ভিদ বলে।
২৪। অনেক লোনামাটির উদ্ভিদে নিউমেটাফোর বা শ্বাসমূল থাকে। কেওড়া উদ্ভিদে শ্বাসমূল থাকে। ২৫। অনেক লোনামাটির উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম হয়। রাইজোফোরা উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম দেখা যায়।
২৬। স্বাভাবিক মাত্রার মিঠা পানির অঞ্চলের স্থলজ উদ্ভিদকে মেসোফাইট বলে।
২৭। একই ধরনের জলবায়ু, একই ধরনের মাটি, একই জাতীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ (ও প্রাণী) নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ ও পৃথকযোগ্য ইকোসিস্টেমকে বলা হয় বায়োম। যেমন-মরুভূমির বায়োম, তৃণভূমির বায়োম।
২৮। পৃথিবীকে মোট ৬টি প্রাণিভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের অবস্থান ও বিস্তৃতির উপর ভিত্তি করে PL. Sciater ১৮৫৭ সালে প্রথম এই বিভাজন করেন।
২৯। পৃথিবীর ৬টি প্রাণিভৌগোলিক অঞ্চল হলো- (i) প্যালিআর্কটিক অঞ্চল, (ii) ওরিয়েন্টাল অঞ্চল, (iii) অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চল, (iv) নিওট্রপিক্যাল অঞ্চল, (v) ইথিওপিয়ান অঞ্চল এবং (vi) নিআর্কটিক অঞ্চল।
৩০। বাংলাদেশ ওরিয়েন্টাল অঞ্চলের অন্তর্গত।
৩১। বাংলাদেশে সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষের মধ্যে সিভিট, গর্জন, চন্দুল অন্যতম।
৩২। সিলেটের রাতারগুল একটি জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট। এখানে প্রধান উদ্ভিদ হিজল ও করচ।
৩৩। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী।
৩৪। গোলপাতা উদ্ভিদের পাতা গোল নয়, বরং নারিকেল পাতার মতো লম্বা। গোলপাতা অতি সংক্ষিপ্ত কাণ্ডবিশিষ্ট।
৩৫। বাংলাদেশের কয়েকটি এন্ডেমিক উদ্ভিদ হলো ক্ষুদে বড়লা (Knema bengalensis). রোট্যলা (Rotala simpliciuscula), নোথোপেজিয়া (Nothopegia acuminata)।
৩৬। বাংলাদেশে কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হলো মল্লিকা ঝাঁঝি (Aldrovanda vesiculosa). কোরুদ (Licula peltata). ক্লোরোফাইটাম (Chlorophytum repalense)।
৩৭। বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত (পৃথিবী থেকেই বিলুপ্ত, কারণ এটি বাংলাদেশে এন্ডেমিক) একটি উদ্ভিদ হলো Nothopegia acuminata J. sinclair (Acanthaceae)। এটি Sinchlair ১৯৫৫ সনে কক্সবাজারের কলাতলি ছড়া থেকে নতুন প্রজাতি হিসেবে আবিষ্কার করেছিলেন। no
৩৮। বাংলাদেশে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র হলো হালদা নদী।
৩৯। বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম রাজশকুন, নীলগাই, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির ইত্যাদি।