HSC জীববিজ্ঞান ১ম পত্র ১১শ অধ্যায় | HSC Biology 1st Paper Chapter 11 MCQ
সার-সংক্ষেপ
টিস্যু কালচার : গবেষণাগারে কৃত্রিম পুষ্টি মাধ্যমে কোনো বিভাজনক্ষম টিস্যুর সংখ্যাবৃদ্ধিই টিস্যু কালচার। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে হাজার হাজার চারা উৎপাদন করা সম্ভব। টিস্যু কালচার প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপন্ন চারাগুলো একই বয়সের হয় এবং গুণগত মান বজায় থাকে, ফলে ফলন বাড়ে। একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভাইরাসমুক্ত বীজ তৈরি করা হয়, ফলে ফসল ভাইরাস আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকে এবং ফলন হ্রাস পায় না, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং : কোনো জীব থেকে কাঙ্ক্ষিত কোনো জিন পৃথক করে নিয়ে অন্য কোনো কাঙ্ক্ষিত জীবকোষে প্রতিস্থাপন করাই হলো জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জিন প্রকৌশল। এতে দুটি পৃথক DNA-এর অংশের সমন্বয়ে একটি নতুন প্রকৃতির DNA তৈরি হয়, যাকে বলা হয় রিকম্বিনেন্ট DNA। রিকম্বিনেন্ট DNA দিয়ে তৈরি নতুন বৈশিষ্ট্যের জীবকে বলা হয় GMO (genetically modified organism)। বর্তমানে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল প্রয়োগ করে পতঙ্গবিরোধী ভুট্টা, ভাইরাস বিরোধী পেঁপে, সুপার রাইস, ইনসুলিন প্রভৃতি উৎপাদন করা হচ্ছে।
প্লাসমিড : বিভিন্ন অণুজীবে, বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া কোষে তাদের মূল ক্রোমোসোম ছাড়াও এক বা একাধিক বৃত্তাকার DNA থাকে। ক্রোমোসোম বহির্ভূত এসব বৃত্তাকার DNA-কে বলা হয় প্লাসমিড। E. coli ব্যাকটেরিয়া কোষে সর্বপ্রথম প্লাসমিডের সন্ধান পান Laderberg ১৯৫২ সালে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্লাসমিড অত্যন্ত আবশ্যকীয় উপাদান। প্লাসমিড বিভিন্ন রকম হতে পারে।
ইনসুলিন : ইনসুলিন একটি হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ের বিটা-কোষ হতে নিঃসৃত হয় এবং রক্তে বিদ্যমান গ্লুকোজের উচ্চমাত্রা থেকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। দেহে ইনস্যুলিনের অভাব হলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। ইনসুলিন ৫১টি অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে গঠিত ক্ষুদ্রাকার প্রোটিন। দুটি পলিপেপটাইড চেইন দুটি ডাই-সালফাইড বন্ডের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে ইনসুলিন গঠন করে। বর্তমানে মানুষের ইনসুলিন নিঃসরণকারী জিনকে E. coli ব্যাকটেরিয়াতে স্থানান্তর করে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে ইনসুলিন উৎপাদন করা হচ্ছে। ডায়াবেটিক রোগ চিকিৎসার প্রধান হাতিয়ার হলো ইনস্যুলিন।
জিনোম সিকোয়েন্সিং: কোনো জীবের জিনোমন্থ DNA অণুর অনুদৈর্ঘ্যে নিউক্লিওটাইডসমূহ (ATGC) কোন অনুক্রমে সজ্জিত আছে তা জানাই হলো জিনোম সিকোয়েন্সিং বা DNA সিকোয়েন্সিং। কোনো জীবের জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন হলে তার বিভিন্ন জোনের অবস্থান ও কার্যকারিতা জানা সহজ হয়। জিনের অবস্থান ও কাজ জানা গেলে তার ত্রুটি-বিচ্যুতি অপসারণ করা সম্ভব হয়। G = Living Modified Organism । GMO-Genetically Modified Organism; LMO
এই অধ্যায়ে দক্ষতা অর্জন
১। বায়োটেকনোলজি শব্দটি ১৯১৯ সালে সর্বপ্রথম ব্যবহার করেছিলেন হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কার্ল এরেকি (Karl Ereky)।
২। প্রাচীনতম বায়োটেকনোলজি বা জীবপ্রযুক্তির একটি উদাহরণ হলো দুধ থেকে দই তৈরি।
৩। জীবন্ত উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা এদের অংশবিশেষ ব্যবহার করে মানবকল্যাণে ব্যবহারোপযোগী উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব বা কোনো দ্রব্য উৎপাদনে প্রয়োগকৃত প্রযুক্তি হলো জীবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি (কোলম্যান-১৯৬৮)।
৪। বু-বায়োটেকনোলজি বলতে বায়োটেকনোলজির সামুদ্রিক প্রয়োগ নির্দেশ করা হয়।
৫। গ্রিন বায়োটেকনোলজি বলতে বায়োটেকনোলজির কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ নির্দেশ করা হয়।
৬। রেড এ্যান্ড হোয়াইট বায়োটেকনোলজি বলতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বায়োটেকনোলজির প্রয়োগ নির্দেশ করা হয়।
৭। উদ্ভিদের বিভাজনে সক্ষম কোনো অঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো টিস্যু সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত অবস্থায় পুষ্টি মাধ্যমে বৃদ্ধিকরণ প্রক্রিয়াকে টিস্যুকালচার বলে।
৮। উদ্ভিদের প্রতিটি সজীব কোষের একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদে পরিণত হওয়ার অন্তর্নিহিত ক্ষমতাকে বলা হয় টটিপটেন্সি।
৯। উদ্ভিদের অতি ক্ষুদ্র অংশ ব্যবহার করে অধিক সংখ্যক পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদ তৈরি প্রক্রিয়াকে মাইক্রোপ্রোপাগেইশন বলা হয়।
১০। জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী Gottlieb Habarlandt কে টিস্যুকালচার প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
১১। গবেষণাগারে কাচপাত্রে কালচার করাকে In-vitro কালচার বলা হয়।
১২। টিস্যুকালচারের জন্য নির্বাচিত উদ্ভিদাংশকে এক্সপ্লান্ট বলা হয়।
১৩। এক্সপ্লান্ট থেকে সৃষ্ট অবয়বহীন টিস্যুগুচ্ছকে ক্যালাস বলা হয়।
১৪। কোনো জীবকোষ থেকে কোনো কাঙ্ক্ষিত জিন নিয়ে অন্য কোনো জীবকোষে স্থাপন ও কর্মক্ষম করা অথবা নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টির জন্য কোনো জীবের DNA-তে পরিবর্তন ঘটানোকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জিন প্রকৌশল বলা হয়।
১৫। কোনো কাঙ্ক্ষিত জিন অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সৃষ্ট জীবকে GMO (Genetically Modified Organism) বা GEO (Genetically Enginered Organism) বলা হয়।
১৬। একটি জীবের কোষ থেকে কোনো কাঙ্ক্ষিত DNA-এর অংশ (জিন) কেটে নিয়ে অন্য জীবের কোষের DNA-এর সাথে সংযুক্ত করার ফলে সৃষ্ট নতুন প্রকৃতির DNA-কে Recombinant DNA বলে।
১৭। জিন প্রকৌশলগত যে প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো জীবের DNA-তে কাঙ্ক্ষিত গাঠনিক পরিবর্তন আনা যায় তাকে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি বলে।
১৮। কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে মূল ক্রোমোসোম ছাড়া যে বৃত্তাকার দ্বিসূত্রক DNA অণু বিরাজ করে তাকে প্লাসমিড বলে।
১৯। Laderberg ১৯৫২ সনে E. coli ব্যাকটেরিয়াতে সর্বপ্রথম প্লাসমিডের সন্ধান পান।
২০। ট্রান্সজেনিক ও রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে E. coli, Agrobacterium tumefaciens ব্যাকটেরিয়া অধিকহারে ব্যবহার করা হয়।
২১। যে এনজাইম প্রয়োগ করে DNA অণুর সুনির্দিষ্ট সিকোয়েন্স কেটে নেয়া যায় সেই এনজাইমকে রেস্ট্রিকশন এনজাইম বলে। যে সিকোয়েন্সকে কেটে নেয়া হয় তাকে রেস্ট্রিকশন সাইট বা রিকগনিশন সাইট বলা হয়।
২২। রেস্ট্রিকশন এনজাইম ব্যাকটেরিয়াতেই তৈরি হয়। কয়েকটি রেস্ট্রিকশন এনজাইম হলো Bam HI, Hind III, Eco RI ইত্যাদি।
২৩। কাঙ্ক্ষিত নতুন জিনের অন্তর্ভুক্তির ফলে সৃষ্ট নতুন প্রকৃতির উদ্ভিদকে ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ বলে।
২৪। রিকম্বিনেন্ট DNA কে পোষক কোষে প্রবেশ করানোর জন্য নিম্নলিখিত যেকোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। ভৌতিক প্রক্রিয়া, রাসায়নিক প্রক্রিয়া অথবা ভেক্টর প্রক্রিয়া।
২৫। কোনো কাঙ্ক্ষিত জিনকে হুবহু কপি করা বা সংখ্যা বৃদ্ধি করাই হলো জিন ক্লোনিং।
২৬। পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশনকে সংক্ষেপে PCR বলা হয়।
২৭। জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসলের রোগ-বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে ফসল উৎপন্ন করা হয় তাকে GM ফসল বলে। Bt-বেগুন একটি GM ফসল। Bacillus thuringiensis এর জিন অন্তর্ভুক্তিকে Bt- দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
২৮। দুটি চেইন-এ মোট ৫১টি অ্যামিনো অ্যাসিড দিয়ে মানুষের ইনসুলিন গঠিত।
২৯। মানুষের ১১ নং ক্রোমোসোমের খাটো বাহুর শীর্ষ অংশের DNA তে ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিন অবস্থিত।
৩০। হিউমুলিন জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে সৃষ্ট ইনসুলিনের ট্রেড নাম।
৩১। ইন্টারফেরন হলো একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রোটিন যা সাধারণত কোনো ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেহে তৈরি হয়।
৩২। TPA হলো Tissue Plasminogen Activator এর সংক্ষিপ্ত রূপ। TPA জমাট রক্ত তরল করার নিষ্ক্রিয় এনজাইম Plasminogen কে সক্রিয় করে তোলে।
৩৩। মানবদেহে কোনো নির্দিষ্ট রোগ উৎপাদনের জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ জিনকে সংশোধন করার পদ্ধতি হলো জিনথেরাপি।
৩৪। কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল দ্রব্য বৃহত্তর জীবের মাধমে অধিক মাত্রায় উৎপাদন প্রক্রিয়া হলো বায়োফার্মিং (Biopharming), যেমন ছাগলের মাধ্যমে অ্যান্টিথ্রমবিন উৎপাদন।
৩৫। তেল ও হাইড্রোকার্বনকে অতি দ্রুত পরিবর্তন করে পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য জিন প্রকৌশল প্রযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন Pseudomonas ব্যাকটেরিয়া।
৩৬। কোনো জীবকোষে অবস্থিত জিন সমষ্টিকে ঐ জীবকোষ তথা ঐ জীবের জিনোম বলা হয়।
৩৭। একটি জীবের জিনোমকে ঐ জীবের মাস্টার বুপ্রিন্ট বলা হয়।
৩৮। কোনো DNA অণুর অনুদৈর্ঘ্যে ATGC বেসগুলোর অনুক্রমিক সাজানো পদ্ধতি হলো ঐ DNA অণুর জিনোম সিকোয়েন্স। কোনো DNA অণুর জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন পদ্ধতি হলো জিনোম সিকোয়েন্সিং।
৩৬। বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল হক (এখন প্রয়াত) ও তাঁর সহযোগীরা তোষা পাটের (Corchorus olitorius) জিনোম সিকোয়েন্সিং করেন, যাতে বেসপেয়ার আছে ১২০ কোটি।
৪০। কোনো জীবের DNA কে জেল ইলেকট্রোফোরেসিস করলে জেল-এ যে সুনির্দিষ্ট ব্যান্ড প্যাটার্ন সৃষ্টি হয় তাকে DNA ফিংগারপ্রিন্ট বলা হয়। হাতের আঙ্গুলের ছাপের মতোই DNA ফিংগারপ্রিন্ট কোনো ব্যক্তির জন্য সুনির্দিষ্ট ও স্বকীয়। একে DNA প্রোফাইলও বলা হয়।