বিভিন্ন ধরনের জিন এবং তাদের বৈশিষ্ট্য
বিভিন্ন ধরনের জিন
লিখাল জিন (Lethal gene): যে জিনের বহিঃপ্রকাশের কারণে জীবের মৃত্যু হয় তাকে লিথাল জিন বলে।
অঙ্কোজিন (Oncogene): যে জিনের কারণে ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হয় তাকে অঙ্কোজিন বলে
সেক্স-ক্রোমোসোমাল জিন (Sex-chromosomal gene): সেক্স (X, Y)-ক্রোমোসোেম যেসব জিন বহন করে তাদের সেক্স- ক্রোমোসোমাল জিন বলে। যেমন- হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা ইত্যাদি।
ট্রান্স জিন (Trans gene) : যে জিন উদ্ভিদ কোষ বা প্রাণি কোষ থেকে নিয়ে অন্য কোনো প্রজাতির উদ্ভিদ কোষ বা প্রাণি কোষে প্রতিস্থাপন করা হয় তাকে ট্রান্স জিন বলে।
• খণ্ডিত জিন (Split gene): যে জিন ইনট্রন ও এক্সন সহযোগে গঠিত তাকে খণ্ডিত জিন বলে।
• সিউডো জিন (Pseudo gene): DNA-এর যে অংশ নিষ্ক্রিয় থাকে বা জিনের যে অংশ থেকে কোনো পলিপেপটাইড তৈরি হয় না তাকে সিউডো জিন বলে।
• লিংকড জিন (Linked gene): যখন দুটি জিন কোনো ক্রোমোসোমে একই সঙ্গে অবস্থান করে কিন্তু স্বাধীনভাবে সঞ্চারিত হয় না তখন তাদেরকে বলা হয় লিংকড জিন।
কোনো প্রজাতির কোষে বিদ্যমান সকল ধরনের এক সেট ক্রোমোসোমে বিদ্যমান সকল জিনের সমষ্টিকে জিনোম বলে। জার্মান উদ্ভিদ বিজ্ঞানী Hans Winkler ১৯২০ সালে সর্বপ্রথম জিনোম শব্দটি ব্যবহার করেন। মানব জিনোমে প্রায় ৩০০০ মিলিয়ন ক্ষারক-যুগল (base pairs) থাকে যা 24 (22A + 1X + 1Y) টি ক্রোমোসোমে বণ্টিত থাকে। সব মানুষের জিনোমের গঠন ৯৯.৯ ভাগ একই রকম। জিনের গঠনের ০.১ ভাগ ভিন্নতার কারণে বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রে X ক্রোমোসোমে সবচেয়ে বেশি (২৯৬৮টি) জিন থাকে এবং Y ক্রোমোসোমে সবচেয়ে কম (২৩১টি) জিন থাকে। মানব জিনোমে মাত্র ২ ভাগ জিন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশে অংশগ্রহণ করে। বাকি ৯৮ ভাগ জিনই নিষ্ক্রিয় থাকে। এদের জাঙ্ক DNA (junk DNA) বলে। মানুষের জিনোমের সাথে শিম্পাঞ্জির জিনোমের ৯৮ ভাগ এবং গরিলা জিনোমের ৯৭ ভাগ মিল রয়েছে।
জিনের প্রকৃতি: যে কোনো জিনেই মিউটেশন ঘটতে পারে যার মাধ্যমে একটি স্থায়ী ও বংশপরম্পরায় স্থানান্তরযোগ্য নতুন প্রকরণ সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো একাধিক জিন মিলে একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- মানুষের উচ্চতা। কখনো কখনো একটি জিন অন্য জিনের প্রকাশকে পরিবর্তন করে দিতে পারে, অনেক জিনের প্রকাশ পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম নিয়ামক দ্বারা জিনের যে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে। জিনের বড় ধরনের পরিবর্তন জীবের বৈশিষ্ট্যে প্রকাশ পায়। প্রকৃতকোষী জীবের জিনে কোডিং ও নন-কোডিং অংশ থাকে। এদেরকে যথাক্রমে এক্সন (exon) ও ইনট্রন (intron) বলে। কেবল এক্সন প্রোটিন সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে।
একটি স্তন্যপায়ী জীবের কোষে ৫০,০০০ এর অধিক জিন থাকতে পারে। প্রতিটি জিন একটি সুনির্দিষ্ট DNA অংশ নিয়ে গঠিত এবং এর নিউক্লিয়োটাইড সংখ্যা ও অনুক্রমও সুনির্দিষ্ট। সুনির্দিষ্ট ক্ষারক অনুক্রম সুনির্দিষ্ট তথ্য বা সংকেত নির্দেশ করে। এ পর্যন্ত হিসাবকৃত ক্ষুদ্রতম জিনে ৫১টি নিউক্লিয়োটাইড এবং বৃহত্তম জিনে ৪০,০০০টি নিউক্লিয়োটাইড রেকর্ড করা হয়েছে।
প্রকৃতকোষী জীবের বিশেষ করে স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও পাখির জিনের সংকেত বহনকারী Gb (exon) মাঝে মধ্যে সংকেতবিহীন ইনট্রন (intron) অংশ লক্ষ্য করা যায়। এমন ধরনের জিনকে স্প্লিট জিন (split gene) বলে। হিউম্যান জিনোম প্রোজেক্টের তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ সালে মানুষের জিনোমে ২৯০০ মিলিয়ন নিউক্লিয়োটাইড এবং প্রায় ৩০,০০০ হাজার জিন এর উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে।