জেনেটিক কোড সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সারণী, এবং তথ্য
জেনেটিক কোড (Genetic code)
আমরা এখন জানি যে, জীবের সকল বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে DNA অণুর বিশেষ বিশেষ অংশ যা জিন (gene) হিসেবে পরিচিত। জিন থেকে একটি নির্দেশনা (গোপন বার্তা) নিয়ে তৈরি হয় mRNA. mRNA তখন কোষীয় রাইবোসোমকে মঞ্চ বানিয়ে tRNA এর মাধ্যমে জিনের সেই বিশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিড এনে একটির পর একটি সাজিয়ে বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে। কোষে তৈরিকৃত সেই প্রোটিনসমূহই জীবের সকল বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে এবং কোষীয় সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
(ⅰ) চারটি বেস (ATGC) এর বিভিন্ন কম্বিনেশনে তৈরি হলো DNA অণু। (ii) আবার চারটি বেস (AUGC) এর বিভিন্ন। কম্বিনেশনে তৈরি হয় RNA অণু। (iii) অন্যদিকে ২০ প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিডের বিভিন্ন কম্বিনেশনে তৈরি হয় বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন। এমন প্রোটিনও আছে যাতে দশ হাজারের উপর অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। প্রোটিনে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় একটির পর আর একটি সজ্জিত থাকে। এই সাজানো প্রক্রিয়ায় একটি ভুল অ্যামিন অ্যাসিড সংযোজন হলে বা বাদ পড়লে প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য ও এর কাজ বিনষ্ট হবে অথবা জীবদেহের ক্ষতি হবে।
মানুষের ইনসুলিন একটি প্রোটিন। এতে সুনির্দিষ্ট সজ্জায় ৫১টি অ্যামিনো অ্যাসিড আছে। সুনির্দিষ্ট সজ্জাটি এমন : অ্যাসপারজিন + সেরিন + টাইরোসিন + প্রোলিন গ্লাইসিন + প্রোলিন সেরিন + সেরিন + টাইরোসিন + গ্লাইসিন + টাইরোসিন + সিস্টিন + ..... + আরজিনিন (৫১ নং); এই ক্রমসজ্জায় কোনো ভুল হলে মানবদেহে ইনসুলিন কোনো কাজ করবে না। মানুষের ইনসুলিন তৈরির জিন থাকে ১১নং ক্রোমোসোমের খাটো বাহুর শীর্ষে।
যেকোনো প্রোটিনের (অ্যান্টিবডি, এনজাইম, হরমোন, গাঠনিক প্রোটিন ইত্যাদি) অ্যামিনো অ্যাসিডে সঠিক সজ্জাপদ্ধতি নির্ধারিত হয় জেনেটিক কোডের মাধ্যমে যার ভিত্তি হলো DNA অণুতে অবস্থিত জিন। জেনেটিক কোড হলো একটি 3-Letter (তিনটি নিউক্লিয়োটাইড বা বেস) কোড যা DNA অণুতে পরপর একত্রে বিন্যস্ত থাকে। DNA অণুতে অবস্থিত 3-Letter কোড প্রথমে রূপান্তরিত হয়ে mRNA অণুতে 3-Letter কোডন হিসেবে সজ্জিত হয়। mRNA অণুর 3- Letter কোডন tRNA-এর মাধ্যমে সঠিক অ্যামিনো অ্যাসিডটি বেছে নিয়ে প্রোটিন অণুতে সংযুক্ত করে। কাজেই ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত প্রতি তিনটি বেসগুচ্ছ এবং এরা যে সঠিক অ্যামিনো অ্যাসিড নির্বাচন করে তার মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট কোডিং সম্পর্ক হলো জেনেটিক কোড। DNA বা RNA বেসসমূহের মাধ্যমে জেনেটিক কোড প্রকাশ করা যায়। (The specific coding relationship between bases and the amino-acids they specify is known as genetic code.)
সহজ কথায় জেনেটিক কোড হলো DNA অণুর নিউক্লিয়োটাইডের অনুক্রম (sequence) এবং প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিডের অনুক্রমের মধ্যে একটি যোগাযোগ পদ্ধতি। DNA অণুর নিউক্লিয়োটাইড বিন্যাসের সাথে প্রোটিনের অ্যামিনো অ্যাসিড বিন্যাসের মধ্যে এই ধরনের সামঞ্জস্য প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য করেন Sarabhai ও তাঁর সহকর্মীগণ ১৯৬৪ সনে। Yanoklei ও তাঁর সহকর্মীগণ একই ধরনের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেছিলেন।
DNA এবং RNA-এর একটি সিকোয়েন্স সেট যা কোনো জীবের প্রোটিন তৈরির জন্য অ্যামিনো অ্যাসিড সিকোয়েন্স নির্ধারণ করে তাই জেনেটিক কোড। জেনেটিক কোড বংশগতির বায়োকেমিক্যাল ভিত্তি। একাধিক কোডন একই অ্যামিনো অ্যাসিড কোড করার প্রবণতাকে কোডের অধোগামিতা (redundancy) বলে।
কোডন (Codon):
mRNA অণুর ধারাবাহিক অনুক্রমের তিনটি বেসকে একত্রে একটি কোডন বলা হয়। একটি কোডন একটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে কোড করে।
কোডনের সংখ্যা:
(ⅰ) DNA বা RNA অণুতে বেস থাকে চার ধরনের (ATGC বা AUGC) কিন্তু প্রোটিন গঠনকারী অ্যামিনো অ্যাসিডের সংখ্যা ২০টি। একটি বেস একটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে কোড করলে মাত্র ৪টি অ্যামিনো অ্যাসিড কোডেড হবে, ১৬টিই বাকি থেকে যাবে।
(ii) দুইটি বেসকে একসাথে গুচ্ছবদ্ধ করলে এদের মধ্যে কম্বিনেশন সংখ্যা দাঁড়াবে সর্বাধিক ১৬টি। ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড কোড করার জন্য ১৬টি কম্বিনেশন অপেক্ষাকৃত কম।
(iii) প্রতি ৩টি বেসকে একসাথে গুচ্ছবদ্ধ করলে এদের কম্বিনেশন সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৪টি যা সহজেই ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিডকে কোড করতে পারবে। কাজেই কোডন সংখ্যা ৬৪টি। এর মধ্যে ৩টি (UAA, UAG, UGA) সমাপ্তি কোডন যাঁরা কোনো অ্যামিনো অ্যাসিড কোড করে না। কাজেই অ্যামিনো অ্যাসিড কোড করার জন্য কার্যকরী কোডন সংখ্যা হলো
Nirenberg, Matthaei ও তাদের সহকর্মীগণ (১৯৬৪) ৬৪টি কোডনের প্রবক্তা। triplet. ট্রিপলেট সিকোয়েন্স ৫'-৩' মুখী। ৬১টি ১টি কোডন (AUG) ট্রান্সলেশন শুরু করার কোডন।ট্রিপ্লেট (Triplet): তিনটি বেস-এর গুচ্ছকে বলা হয় ট্রিপলেট। DNA-এর কোডসমূহ triplet; mRNA-এর কোডনসমূহ ট্রিপলেট, এমনকি tRNA-এর অ্যান্টিকোডনও ট্রিপলেট। তিনটি বেস (নিউক্লিয়োটাইড) এর কার্যকরী গুচ্ছই
জেনেটিক কোডও ট্রিপ্লেট। জেনেটিক কোড নিউক্লিয়োটাইডের ৬৪টি ট্রিপলেট নিয়ে গঠিত। প্রতিটি ট্রিপলেটকে কোডন বলা হয়। প্রতিটি কোডন ২০ প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিডের যেকোনো একটিকে এনকোড করে। ৩টি বেস পেয়ারের কম্বিনেশনকে বলে ট্রিপলেট কোড এবং বিশেষ অ্যামিনো অ্যাসিড কোড করার ট্রিপলেট সিকোয়েন্স হলো কোডন।
অ্যান্টিকোডন (Anticodon) :
tRNA অণুর তিনটি বেস যা mRNA-এর পরিপূরক কোডনের সাথে যুক্ত হতে সক্ষম সেই বেস ট্রিপলেটকে অ্যান্টিকোডন বলা হয়। IRNA-এর অ্যামিনো অ্যাসিড সাইটের উল্টোদিকে অ্যান্টিকোডনের অবস্থান। mRNA অণুর কোডন যদি 5'-AGU-3' হয়, তা হলে RNA-তে অ্যান্টিকোডন হবে 3'-UCA-5'.
কোনো কোনো অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কোডন থাকলেও অনেক অ্যামিনো অ্যাসিড ২, ৩, ৪টি এমনকি ৬টি পর্যন্ত কোডন দিয়ে নির্ধারিত হয়। যেমন- লাইসিন-এর জন্য ২টি, ভ্যালিন-এর জন্য ৪টি, আবার আরজিষ্কিটি এর জন্য ৬টি কোডন থাকে। ১৯৬৬ সালে জেনেটিক কোডের সমপূর্ণ অর্থ জানা সম্ভব হয়। জেনেটিক কোডের পারে জিনি জন্য নিরেনবার্গ ও হরগোবিন্দ খোরানা নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯৬৯ সালে।