কোষ ও এর গঠন জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর সাজেশান ২০২৫-২০২৬
কোষ ও এর গঠন জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১। সেল (Cell): নামকরণ করেন Robert Hooke ১৯৬৫ সালে। পরবর্তীতে সেল এর বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে কোষ বা জীবকোষ।
২। Cell নামের উৎস হলো ল্যাটিন Cellula যার অর্থ হলো ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ।
৩ কাঠের ছিপির পাতলা সেকশন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে রবার্ট হুক যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ দেখতে পেয়েছিলেন সেই ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠগুলোকেই সেল নাম দেন।
81 Micrographia গ্রন্থে Robert Hooke তাঁর কোষসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেন।
৫। কোষ হলো জীবের গঠনগত ও জৈবিক কার্যকলাপের মৌলিক একক যা অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং আত্মজননে সক্ষম।
৬। আদিকালে বায়ুমণ্ডলে বিরাজমান বিভিন্ন গ্যাসের মিলিত ক্রিয়াকলাপে প্রাকৃতিকভাবে প্রথম জৈব অণু সৃষ্টি হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
۹۱ আদি জীবন সম্ভবত সরল RNA সর্বস্ব ছিল যা থেকে পরে প্রোটিন তৈরি হতে পেরেছিল। এই ধারণাকে RNA- world হাইপোথেসিস বলা হয়।
৮। বর্তমান বিশ্বের সকল সরল এককোষী থেকে জটিল বহুকোষী জীবের জেনেটিক কোডন একই; কাজেই একটি উৎস থেকে সকল জীবের সৃষ্টি হয়েছে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়।
৯। প্রথম কোষ ছিল আদি কোষ; তা থেকে মুক্ত DNA কে ঝিল্লিবদ্ধ করে, সৃষ্টি হয় প্রকৃত কোষ, প্রকৃত কোষে এন্ডোসিমবায়োটিক প্রক্রিয়ায় বায়বীয় ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সৃষ্টি হয় প্রকৃত প্রণিকোষ; প্রকৃত প্রাণিকোষে বায়বীয় ফটোসিন্থেটিক ব্যাকটেরিয়া ঢুকে সৃষ্টি হয় প্রকৃত উদ্ভিদ কোষ।
১০। কোষবিদ্যার জনক Robert Hooke; কিন্তু আধুনিক কোষবিদ্যার জনক হলেন Carl P. Swanson ।
১১। জীবের দেহ গঠনকারী কোষ হলো দেহকোষ। হ্যাপ্লয়েড জীবের দেহকোষ হ্যাপ্লয়েড (n) এবং ডিপ্লয়েড জীবের দেহকোষ ডিপ্লয়েড (2n)।
১২। জীবের যৌন প্রজননে অংশগ্রহণকারী ডিম্বাণু ও শুক্রাণু হলো জননকোষ। জননকোষ হ্যাপ্লয়েড। এরা গ্যামিট নামেও পরিচিত।
১৩। যে কোষে কোনো আবরণী বেষ্টিত অঙ্গাণু থাকে না, তা হলো আদিকোষ।
১৪। যে কোষে আবরণী বেষ্টিত অঙ্গাণু থাকে, তা হলো প্রকৃত কোষ।
১৫। একটি এককোষী জীব পারস্পরিক লাভের ভিত্তিতে অন্য একটি জীবের কোষভ্যন্তরে জীবনধারণ করার সম্পর্ককে বলা হয় এন্ডোসিমবায়োসিস।
১৬। আদি কোষে কোনো ক্রোমোসোম থাকে না, এর পরিবর্তে একটি বৃত্তাকার DNA থাকে। এই DNA এর সাথে কোনো হিস্টোন প্রোটিন থাকে না। এই বৃত্তাকার DNA সহ ঐ অঞ্চলকে বলা হয় নিউক্লিয়য়েড (নিউক্লিয়াস নয়।)
১৭। প্রকৃত কেষের DNA লম্বা সূত্রাকার (বৃত্তাকার নয়), হিস্টোন প্রোটিনের সাথে প্যাঁচিয়ে ক্রোমোসোম হিসেবে অবস্থান করে। ক্রোমোসোমবিশিষ্ট ঐ অঙ্গকে নিউক্লিয়াস বলে যা দুটি ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে।
১৮। যে বিশেষ ধরনের প্রোটিন অণুকে DNA স্ট্রান্ড আবৃত করে কুণ্ডলিত হয় তাকে হিস্টোন প্রোটিন বলে।
১৯। উদ্ভিদ কোষ, ব্যাকটেরিয়া কোষ এবং ছত্রাক কোষে কোষঝিল্লির বাইরে জড় কোষপ্রাচীর থাকে। প্রাণিকোষে কোনো কোষ প্রাচীর থাকে না।
২০। কোষ অতি ক্ষুদ্র বলে সাধারণত এদের মাপের ক্ষেত্রে মাইক্রোমিটার (um) তথা মাইক্রন (µ) এবং ন্যানোমিটার (nm) ব্যবহার করা হয়।
২১। সবচেয়ে ছোট কোষ হলো মাইকোপ্লাজমা এবং সবচেয়ে বড় কোষ হলো উটপাখির ডিম।
২২। একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষে থাকে কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও এর অঙ্গাণুসমূহ, নিউক্লিয়াস এবং কতক নির্জীব বস্তু।
২৩। দু'টি পাশাপাশি উদ্ভিদকোষের মাঝখানে থাকে মধ্যপর্দা, এর ভেতরের তলে থাকে প্রাথমিক প্রাচীর, কোনো কোনো কোষে প্রাথমিক প্রাচীরের ভেতরের তলে থাকে সেকেন্ডারি বা গৌণ প্রাচীর।
২৪। পাশাপাশি দু'টি কোষের প্রাচীরগাত্রের সূক্ষ্ম ছিদ্রের মাধ্যমে সাইটোপ্লাজমিক সংযোগ স্থাপিত হয় যাকে প্লাজমোডেসমাটা বলে।
২৫। সজীব কোষের অভ্যন্তরে অবস্থিত স্বচ্ছ, আঠালো জেলির ন্যায় অর্ধতরল কলয়েডধর্মী সজীব পদার্থকে প্রোটোপ্লাজম বলে। প্রোটোপ্লাজম অর্থ আদি বস্তু।
২৬। প্রোটোপ্লাজমকে জীবনের ভৌত ভিত্তি বলা হয়।
২৭। কোষের সর্ববাহিরে অবস্থিত সজীব ঝিল্লিই কোষঝিল্লি বা প্লাজমামেমব্রেন। উদ্ভিদ কোষ, ব্যাকটেরিয়া কোষ ও ছত্রাক কোষে এর বাইরে একটি জড় প্রাচীর থাকে, যা কোষপ্রাচীর নামে পরিচিত। বলা যায় কোষের প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে রাখা সজীব ঝিল্লিই কোষঝিল্লি।
২৮। ফসফোলিপিড বাইলেয়ার দিয়ে কোষঝিল্লি গঠিত।
২৯। কোষঝিল্লি দিয়ে পরিবেষ্টিত এবং কোষস্থ নিউক্লিয়াসের বাইরে অবস্থিত প্রোটোপ্লাজমই সাইটোপ্লাজম হিসেবে পরিচিত। সাইটোপ্লাজমে অনেক অঙ্গাণু থাকে।
৩০। কোষের সাইটোপ্লাজমীয় অঙ্গাণুসমূহের মধ্যে রাইবোসোম, সেন্ট্রিয়াল, সাইটোস্কেলিটন- এদের কোনো আবরণী ঝিল্লি নেই। নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে অবস্থিত নিউক্লিয়োলাস-এরও কোনো আবরণী ঝিল্লি নেই।
৩১। দুটি পৃথক সাবইউনিট নিয়ে একটি রাইবোসোম গঠিত। প্রোটিন সংশ্লেষণ করাই রাইবোসোমের প্রধান কাজ, তাই রাইবোসোমকে কোষের প্রোটিন ফ্যাক্টরি বলা হয়।
৩২। গলগি বডিকে কোষের ট্রাফিক পুলিশ বলা হয় কারণ কোষস্থ ঝিল্লিবদ্ধ বস্তুসমূহ কোষের কেন্দ্রীয় অংশ থেকে পরিধির দিকে, এমনকি বাইরে নিয়ে যায় গলগি বস্তু।
৩৩। যে সকল বস্তু লাইসোসোমের ঝিল্লিকে স্থিতি দান করে অর্থাৎ বিদীর্ণ হতে দেয় না সে সকল বস্তুকে বলা হয় Stabilizer। আর যে সকল বস্তু এদের ঝিল্লিকে বিদীর্ণ হতে ভূমিকা রাখে তাদেরকে বলা হয় Labilizer |
৩৪। মাইটোকন্ড্রিয়াকে কোষের পাওয়ার হাউস বা শক্তিঘর বলা হয়।
৩৫। ক্লোরোপ্লাস্টকে কোষের রান্নাঘর, শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের কারখানা বা শক্তি রূপান্তরের অঙ্গাণু বলা হয়।
৩৬। কোষের অঙ্গাণুসমূহের মধ্যে কেবলমাত্র মাইটোকন্ড্রিয়া ও ক্লোরোপ্লাস্টের নিজস্ব বৃত্তাকার DNA ও 70S রাইবোসোম আছে।
৩৭। সেন্ট্রিয়োল জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে।
৩৮। কেবলমাত্র নিউক্লিয়াসের আবরণী ঝিল্লিতে অসংখ্য রন্ধ্র থাকে যা নিউক্লিয়ার রন্ধ্র নামে পরিচিত।
৩৯। পারঅক্সিসোম এক আবরণী বেষ্টিত।
৪০। হিস্টোন প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় DNA-কে বলা হয় নিউক্লিয়োসোম।
৪১। হেটেরোক্রোমাটিন mRNA সংশ্লেষণে অংশগ্রহণ করে না।
৪২। ক্রোমোসোমের মাথায় (শেষ প্রান্তে) DNA-এর repeated sequence হলো টেলোমিয়ার। টেলোমিয়ারই নির্ধারণ করে কোষটি কতবার বিভক্ত হবে।
৪৩। পিউরিন বেস দুই রিং বিশিষ্ট কিন্তু পাইরিমিডিন বেস এক রিং বিশিষ্ট।
881 নিউক্লিক অ্যাসিডের গাঠনিক একক হলো নিউক্লিয়োটাইড।
৪৫। DNA অণুর পাশাপাশি দুটি স্ট্র্যান্ড অ্যান্টিপ্যারালাল অর্থাৎ একটি অপরটির সাথে উল্টোভাবে অবস্থান করে।
৪৬। DNA অণুর দুটি স্ট্র্যান্ড হাইড্রোজেন বস্তু দ্বারা সংযুক্ত থাকে।
৪৭। mRNA তে অবস্থিত পরপর সজ্জিত এমন তিনটি বেস যা মিলিতভাবে একটি নির্দিষ্ট অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ (কোড) করে সেই তিনটি বেস হলো একটি কোডন।
৪৮। DNA অণুতে বেসসমূহ এবং এদের দ্বারা নির্দেশিত অ্যামিনো অ্যাসিডের মধ্যকার সুনির্দিষ্ট কোডিং সম্পর্ক হলো জেনেটিক কোড।
৪৯। ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যূগারের ২নং কার্বনে কোনো অক্সিজেন (OH গ্রুপ) থাকে না।
৫০। DNA রেপ্লিকেশন হয় অর্ধসংরক্ষণশীল পদ্ধতিতে।
৫১। ট্রিপলেট অনুসজ্জা ৫' থেকে ৩' অভিমুখী হয়।
৫২। অ্যান্টিকোডন হলো tRNA লুপ-এ অবস্থিত একটি ৩ নিউক্লিয়োটাইড অংশ যা mRNA-এর কোডনের সাথে জোড়া বাঁধে।
৫৩। ৬৪টি জেনেটিক কোড-এ অ্যামিনো অ্যাসিড নির্দেশকারী কোডন হলো ৬১টি।
৫৪। প্রোমোটার: একটি নিউক্লিয়োটাইড অনুসজ্জা (sequence) যা একটি জিনের প্রথমে অবস্থিত এবং RNA পলিমারেজ সংযুক্তকারী।
৫৫। TATA BOX: প্রোমোটারের ঐ অংশ যা RNA পলিমারেজ সংযুক্ত করতে সক্ষম।
৫৬। কোডিং স্ট্র্যান্ড : DNA অণুর যে স্ট্র্যান্ডকে কপি করা হয় না এবং যেহেতু এর নিউক্লিয়োটাইড অনুসজ্জা নতুন সৃষ্ট mRNA এর নিউক্লিয়োটাইড অনুসজ্জার অনুরূপ (U-এর স্থলে A ব্যতীত)।
৫৭। কোডিং স্ট্র্যান্ডকে sense strand ও বলা হয়।
৫৮। mRNA সৃষ্টির জন্য DNA অণুর যে স্ট্র্যান্ডকে ছাঁচ (template) হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঐ স্ট্র্যান্ডকে বলা হয় Anti-sense strand ।
৫৯। Stop codon ৩টি, যথা- UAA, UAG এবং UGA, এরা nonsense codon বা termination codon নামেও পরিচিত।
৬০। Start codon একটি, যথা AUG, এটি মেথিওনিন নির্দেশ করে।
৬১। মাত্র দুইটি অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য ১টি করে কোডন আছে, যথা- AUG (মেথিওনিন) UGG (ট্রিপ্টোফ্যান)।
৬২। লিউসিন আমিনো অ্যাসিড নির্দেশ করার জন্য ৬টি কোডন আছে। এটাই সর্বোচ্চ সংখ্যক কোডন যা একটি অ্যামিনো অ্যাসিডকে নির্দেশ করে। আর্জিনিনের জন্যও ৬টি কোডন আছে।
৬৩। কোডের ভাষা প্রকাশ একমুখী: DNA → mRNA → প্রোটিন।
৬৪। জিন হলো ক্রোমোসোমস্থ DNA-এর একটি অংশ যা একটি কর্মক্ষম পালিপেপ্টাইড চেইন গঠনের উপযুক্ত বার্তা বহন করে।
৬৫। প্রোটিনকে বলা হয় জীবনের ভাষা (Language of life)।
৬৬। প্রকৃতকোষী DNA-এর জিন-এ (ⅰ) কোডিং অংশ (যে অংশকে বলা হয় exons) এবং (ii) নন্ কোডিং অংশ (যাদেরকে বলা হয় introns) থাকে।
৬৭। নতুন সৃষ্টি Pre-mRNA থেকে intron অংশসমূহ কেটে বাদ দিয়ে কেবল exon অংশসমূহ সংযুক্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত mRNA তৈরি হয়।
৬৮। চূড়ান্ত mRNA নিউক্লিয়াস থেকে সাইটোপ্লাজমে চলে আসে এবং রাইবোসোমের সাথে সংযুক্তির মাধ্যমে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রোটিন তৈরি করে।
৬৯। অল্টারনেটিভ স্পাইসিং প্রক্রিয়ায় একটি Pre-mRNA থেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির চূড়ান্ত mRNA তৈরি করে থাকে। ফলে একটি জিন থেকে একাধিক পলিপেপ্টাইড তৈরি হতে পারে। একারণেই মানুষের ২০,০০০ জিন প্রায় ১,০০,০০০ প্রকার প্রোটিন তৈরি করতে সক্ষম হয়।
৭০। বংশগতির রাসায়নিক ভিত্তি হলো DNA (DNA is the chemical basis of heridity)।
৭১। RNA থেকে DNA সৃষ্টি প্রক্রিয়া হলো রিভার্জ ট্রান্সক্রিপশন।