টিস্যু ও টিস্যুতন্ত্র mcq hsc
সার-সংক্ষেপ
ভাজক টিস্যু (মেরিস্টেম):
যে টিস্যুর কোষসমূহ বিভাজনের মাধ্যমে কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটায়, ফলে উদ্ভিদাঙ্গ দৈর্ঘ্যে বা প্রন্থে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় সে টিস্যুই ভাজক টিস্যু। কতক ভাজক টিস্যু উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড বা এদের শাখা-প্রশাখার শীর্ষে অবস্থিত, এদেরকে বলা হয় শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু। এদের বিভাজনের কারণে উদ্ভিদের কাণ্ড বা মূল এবং এদের শাখা-প্রশাখা দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। কতক ভাজক টিস্যু উদ্ভিদাঙ্গের পার্শ্ব বরাবর লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত, এদেরকে বলা হয় পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু। পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যুর বিভাজনের কারণে উদ্ভিদাঙ্গ প্রন্থে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। উদ্ভিদের জীবনে ভাজক টিস্যুর গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ ভাজক টিস্যু না থাকলে উদ্ভিদের দেহ গঠন ও বৃদ্ধি হতো না।
ভাস্কুলার টিস্যু :
জাইলেম ও ফ্লোয়েম-এর সমন্বয়ে গঠিত টিস্যুই ভাস্কুলার টিস্যু। কেবলমাত্র টেরিডোফাইটস্, নগ্নবীজী উদ্ভিদ এবং আবৃতবীজী উদ্ভিদে ভাস্কুলার টিস্যু থাকে, তাই এদেরকে ভাস্কুলার উদ্ভিদ বলা হয়। ট্রাকিড, ভেসেল, জাইলেম ফাইবার এবং জাইলেম প্যারেনকাইমা নিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত। সীভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম ফাইবার ও ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত। একাধিক প্রকার কোষ নিয়ে গঠিত বলে এরা জটিল টিস্যু। এ টিস্যুর কোষসমূহ বিভাজনে অক্ষম বলে এরা স্থায়ী টিস্যু। কাজেই ভাস্কুলার টিস্যু হলো স্থায়ী এবং জটিল টিস্যু। জাইলেম টিস্যু প্রধানত মূল থেকে পাতা পর্যন্ত পানি পরিবহন করে, অপরপক্ষে পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্য ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে উদ্ধিদদেহের সব সজীব কোষে পৌঁছে। খাদ্য এবং খাদ্যের কাঁচামাল পরিবহন করে বলে এরা পরিবহন টিস্যু নামেও পরিচিত। মূলে জাইলেম ও ফ্লোয়েম পৃথক পৃথক বান্ডলে অবস্থান করে, কিন্তু কাণ্ডে একই বান্ডলে অবস্থান করে। কাজেই ভাস্কুলার বান্ডলের প্রকৃতি দেখে মূল এবং কাণ্ড শনাক্ত করা যায়।
টিস্যুতন্ত্র:
টিস্যু দিয়ে টিস্যুতন্ত্র গঠিত হয়। একই ধরনের কাজ করে এমন এক বা একাধিক টিস্যু মিলেই একটি টিস্যুতন্ত্র গঠন করে। অবস্থান ও কাজের উপর ভিত্তি করে টিস্যুতন্ত্র তিন প্রকার; যথা- এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র, গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র এবং ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র। উদ্ভিদাঙ্গের বহিরাবরণ সৃষ্টিকারী টিস্যুর নাম এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র। অভ্যন্তরীণ অংশকে রক্ষা করা এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্রের প্রধান কাজ। উদ্ভিদাঙ্গের মূলভিত্তি গঠনকারী টিস্যু সমষ্টিকে নিয়ে গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র গঠিত। গ্রাউন্ড টিস্যু একাধিক অংশে বিভক্ত। জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু দিয়ে গঠিত টিস্যুতন্ত্রকে ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র বলা হয়। উদ্ভিদাঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান এবং খাদ্য ও কাঁচামাল পরিবহনই ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্রের প্রধান কাজ।
এই অধ্যায়ে দক্ষতা অর্জন
১। একই উৎস থেকে সৃষ্ট, একই ধরনের কাজ সম্পন্নকারী সমধর্মী অবিচ্ছিন্ন কোষগুচ্ছকে টিস্যু (কোষকলা) বলা হয়।
২। টিস্যু প্রধানত দুই প্রকার; ভাজক টিস্যু এবং স্থায়ী টিস্যু।
৩। বিভাজনযোগ্য কোষই ভাজক কোষ; ভাজক কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যুই ভাজক টিস্যু।
81 ভাজক টিস্যুকে মেরিস্টেম বলা হয়।
৫। উৎপত্তি অনুসারে ভাজক টিস্যু তিন প্রকার;
যথা- (ⅰ) প্রারম্ভিক ভাজক টিস্যু (promeristem),
(ii) প্রাইমারি ভাজক টিস্যু (Primary meristem) এবং
(iii) সেকেন্ডারি ভাজক টিস্যু (Secondary meristem) |
৬। উদ্ভিদদেহে অবস্থান অনুযায়ী ভাজক টিস্যু তিন প্রকার;
যথা- (ⅰ) শীর্ষস্থ ভাজক টিস্যু (Apical meristem),
(ii) ইন্টারক্যালারি ভাজক টিস্যু (Intercalory meristem) এবং
(iii) পার্শ্বীয় ভাজক টিস্যু (Lateral meristem) ।
৭। কোষবিভাজন অনুসারে ভাজক টিস্যু তিন প্রকার;
যথা- মাস ভাজক টিস্যু, (mass meristem),
(ii) প্লেট ভাজক টিস্যু (Plate meristem) এবং
(iii) রিব ভাজক টিস্যু (Rib meristem)।
৮। কাজ অনুসারে ভাজক টিস্যু তিন প্রকার;
যথা- (ⅰ) প্রোটোডার্ম (Protoderm),
(ii) প্রোেকাম্বিয়াম এবং
(iii) গ্রাউন্ড মেরিস্টেম (Ground meristem)।
৯। বিভাজনে অক্ষম কোষ দিয়ে গঠিত টিস্যু হলো স্থায়ী টিস্যু।
১০। একই ধরনের কাজ করে এমন এক বা একাধিক টিস্যু মিলে একটি টিস্যুতন্ত্র গঠিত হয়।
১১। উদ্ভিদ দেহের সব টিস্যুকে তাদের অবস্থান ও কাজের উপর ভিত্তি করে তিনটি টিস্যুতন্ত্রে ভাগ করা হয়।
যথা- (i) এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র,
(ii) গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র এবং
(iii) ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র।
১২। উদ্ভিদদেহের বহিরাবরণ সৃষ্টিকারী টিস্যুতন্ত্র হলো এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র।
১৩। মূলের বহিরাবরণকে এপিরেমা বলে।
১৪। উদ্ভিদের বায়বীয় অঙ্গের বহিরাবরণকে এপিডার্মিস বলে।
১৫। বৃহদাকৃতির ত্বকীয় কোষকে বুলিফর্ম কোষ বলে। গম, ভূট্টা, আখ ইত্যাদি উদ্ভিদের পাতার ত্বকে বুলিফর্ম কোষ দেখা যায়।
১৬। এপিডার্মিসে উপাঙ্গ হিসেবে ট্রাইকোম (রোম), শল্ক, কোলেটার্স, থলি, পত্ররন্ধ্র, পানিরন্ধ্র ইত্যাদি থাকতে পারে।
১৭। বাহিরে এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র এবং অভ্যন্তরে ভাস্কুলার টিস্যুতন্ত্র ছাড়া বাকি সমূদয় অংশই গ্রাউন্ড টিস্যুতন্ত্র।
১৮। পাতার গ্রাউন্ড টিস্যুকে মেসোফিল বলা হয়।
১৯। জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু নিয়ে ভাঙ্গুলার টিস্যুতন্ত্র গঠিত।
২০। প্রথম সৃষ্ট ও সরুগর্তযুক্ত ভেসেল কোষ প্রোটোজাইলেম হিসেবে পরিচিত।
২১। পরে সৃষ্ট ও বড় গর্তযুক্ত ভেসেলকোষ মেটাজাইলেম হিসেবে পরিচিত।
২২। মূলে প্রোটোজাইলেম পরিধির দিকে এবং কাণ্ডে প্রোটোজাইলেম কেন্দ্রের দিকে অবস্থিত।
২৩। ট্রাকিড, ট্র্যাকিয়া (ভেসেল), জাইলেম ফাইবার এবং জাইলেম প্যারেনকাইমা নিয়ে জাইলেম টিস্যু গঠিত।
২৪। পরিণত জাইলেম টিস্যুতে কেবল জাইলেম প্যারেনকাইমা সজীব উপাদান।
২৫। সীভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম ফাইবার এবং ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত।
২৬। পরিণত সিভনলে কোন নিউক্লিয়াস থাকে না।
২৭। ফ্লোয়েম টিস্যুতে অবস্থিত ফাইবার কোষকে বাস্টফাইবার বলে। পাটের আঁশ বাস্ট ফাইবার।
২৮। মূলের ভাস্কুলার বান্ডল অরীয় অর্থাৎ জাইলেম ও ফ্লোয়েম বান্ডলসমূহ পৃথক পৃথকভাবে বৃত্তাকারে, পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ব্যাসার্ধে অবস্থান করে।
২৯। কাণ্ডের ভাস্কুলার বান্ডল সংযুক্ত অর্থাৎ একই ব্যাসার্ধে জাইলেম ও ফ্লোয়েম টিস্যু অবস্থান করে সংযুক্তভাবে একটি ভাস্কুলার বান্ডল গঠন করে।
৩০। সমদ্বিপার্শ্বীয় সংযুক্ত ভাস্কুলার বান্ডল দেখা যায় লাউ, কুমড়া উদ্ভিদে।
৩১। হ্যাড্রোসেন্ট্রিক বা জাইলেমকেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডল দেখা যায় Pteris, Lycopodium ইত্যাদি উদ্ভিদে।
৩২। যে ভাস্কুলার বান্ডলে ফ্লোয়েম কেন্দ্রে থাকে এবং তাকে ঘিরে জাইলেম থাকে সেই ভাস্কুলার বান্ডলকে লেপ্টোসেন্ট্রিক বা ফ্লোয়েমকেন্দ্রিক ভাস্কুলার বান্ডল বলে।
৩৩। একবীজপত্রী উদ্ভিদ মূলে জাইলেম বা ফ্লোয়েম বান্ডলের সংখ্যা সাধারণত ছকের অধিক থাকে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে ছয়ের কম (সাধারণত ৪টি) থাকে।
৩৪। একবীজপত্রী উদ্ভিদকাণ্ডে জাইলেম টিস্যু কতটা Y বা V অক্ষেরের মতো অবস্থায় থাকে। Y-এর দুই মাথায় মেটাজাইলেম এবং লেজে প্রোটোজাইলেম থাকে।
৩৫। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডে ভাস্কুলার বান্ডল বৃত্তাকারে সজ্জিত থাকে কিন্তু একবীজপত্রী উদ্ভিদ কাণ্ডে অসংখ্য ভাস্কুলার বান্ডল গ্রাউন্ড টিস্যুতে বিক্ষিপ্তভাবে বিন্যস্ত থাকে।
৩৬। মূল বা কাণ্ডের কেন্দ্রস্থলে প্যারেনকাইমা টিস্যু দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে মজ্জা বলে।
৩৭। মজ্জা থেকে সরু হয়ে দুই ভাস্কুলার বান্ডলের মাঝখান দিয়ে বর্ধিত অংশকে মজ্জারশ্মি বলে।